বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারাটি ত্রুটি পুর্ন। এর সংশোধন প্রয়োজন।
আইন নিজে যদি কোন অপরাধকে অপরাধ
বলে চিহ্নিত করে দেয় কিন্তু এর জন্য কোন শাস্তির বিধান না রাখে, তাহলে নিশ্চয়ই
মানুষ সেই অপরাধকে সংগঠন না করে থাকবে না।
এখন আমাদের দেশে প্রায় যে অপরাধটি
পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়, তা হল নারী ধর্ষণ।
যদি আজ আইন করা হয়, এটা একটি অপরাধ
কিন্তু এর জন্য কোন শাস্তির বিধান নেই, তাহলে কাল কি হবে তা আমার দ্বারা চিন্তা
করা অসম্ভব প্রায়। আমাদের দণ্ডবিধিতে এমন একটি গুরুতর অপরাধ রয়েছে, যা সংগঠনের ফলে
শুধুমাত্র মূল অপরাধীকে শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে অথচ প্ররোচনা দাতাকে কোন শাস্তির
বিধান রাখা হয়নি। আর,
তা হল ব্যভিচার।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায়
বিবাহের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য এর ব্যভিচারকে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এখানে বলা হয়েছে,
কোন লোক যদি, অপর কোন নারীর স্বামীর বিনা সম্মতিতে বা যৌণকামনার উপস্থিতি ছাড়া যৌণসঙ্গম করে, যে নারী অপর কোন পুরুষের এরূপ যৌণসঙ্গম ধর্ষণের অপরাধ না হলে, সে লোক ব্যভিচার করেছে বলে পরিগণিত হবে ও তাকে যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয় দণ্ডে শাস্তিযোগ্য হবে। এরূপ ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকটি দুষ্কর্মের সহায়তাকারিণী হিসেবে শাস্তিযোগ্য হবে না”।
এ থেকে পেলাম, ধর্ষণ ছাড়া
কোন বিবাহিত স্ত্রী লোকের সাথে তার স্বামীর সম্মতি ছাড়া যৌণ সম্পর্ক স্থাপন করলে তা
ব্যভিচার এবং শাস্তি সর্বোচ্চ সাত বছর বা জরিমানা বা উভয় কিন্তু তা শুধুমাত্র পুরুষের
জন্য, নারীর
জন্য নয়।
যেহেতু, ধর্ষণ নয় অর্থাৎ
বুঝা যাচ্ছে, এখানে
নারীর সম্মতি ছিল। যেখানে নারীর সম্মতি রয়েছে সেখানে কেনই বা তাকে শাস্তির বাহিরে
রাখা হল।
প্রশ্ন এভাবে করা যায়, ‘যেখানে সকল অপরাধী
এবং প্ররোচনা দাতা উভয়কে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে ব্যভিচারকে কেন ব্যতিক্রম করা
হল?’ যেখানে
পরিবার, সংসার, প্রেম, ভালবাসা সব ক্ষেত্রেই
পরক্রিয়াকে সুখ নষ্টকারী হিসেবে বলা হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশীয় আইনে নারীকে পরক্রিয়া
তথা ব্যভিচারের প্ররোচনা দাতা হিসেবে কোন শাস্তির অধীন রাখা হল না।
এই থেকে কি আমরা বলতে পারি না
যে, ‘আইন
নারীকে ব্যভিচারে উৎসাহিত করছে?’ অনেকেই হয়তো বলবে, নারীকে উৎসাহিত নয়, নারীকে কিছুটা
ছাড় দেওয়া হচ্ছে; কেননা, পুরুষের প্রলোভনে
পড়ে নারী হয়ত এই অপরাধ করতে পারে। কিন্তু, এই প্রলোভন তো নারীও দেখাতে পারে। কেননা, যৌণসঙ্গম সংক্রান্ত
ব্যাপারে যে সব সময় পুরুষ উৎসাহী তা কিন্তু নয়; এমনও তো হতে পারে স্ত্রীলোকটি নিজেই মূল
অপরাধী এবং পুরুষ সাহায্যকারী, কিন্তু আমাদের আইনে কোন আলামত ছাড়াই নারীকে সরাসরি প্ররোচনা
দাতা বলে দায়মুক্ত করছে অন্য দিকে পুরুষের কথা চিন্তা না করেই সরাসরি শাস্তির বিধান
রেখেছে।
আবার, যেখানে নারী
ও পুরুষকে আমাদের সংবিধান সমান অধিকার দিয়েছে সেখানে আমরা কীভাবে একই অপরাধের জন্য
পুরুষকে শাস্তি দিচ্ছি অথচ নারীকে সরাসরি দায়মুক্ত করছি? এই প্রশ্নের
উত্তরও পাঠকের কাছে। আরও একটি ব্যাপার হল, ব্যভিচারের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্বামীকেই
অভিযোগ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে অভিভাবককে। যার কারণে, স্বামী তার স্ত্রীকে
দিয়ে নিজের প্রতিপক্ষকে ব্যভিচারের ফাঁদে ফেলতে পারে কেননা, স্ত্রীর জন্য
কোন শাস্তির বিধান নেই। আবার, যে কোন নারী তার প্রেমের ফাঁদে ফেলে আইনের এই ফাঁক কাজে লাগাতে
পারে। এই থেকে দেখা যাচ্ছে,
এই আইনের শুধু অপব্যবহারই সম্ভব। তাই, সরকারের উচিত সংবিধানের ২৭ এবং ২৮ অনুচ্ছেদে
উল্লেখিত আইনের দৃষ্টিতে সমতা অর্থাৎ সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান
আশ্রয় লাভের অধিকারী এবং কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ
বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না এবং রাষ্ট্র
ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন ইত্যাদি মেনে ব্যভিচারের
বিধানটি সংশোধন করা। নহেত এই বিধান সংবিধান পরিপন্থী বলে সর্বদা সমাজ এবং রাষ্ট্রের
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে,
যা আইন হয়েও আইনের উদ্দেশ্যের সাথে পরিপন্থী।
তাই পেনাল কোডের ৪৯৭ ধারার
সংশোধন করে নারী ও পুরুষ উভয়কে শাস্তিয় আওতায় আনা উচিত।
ধারাটি
নিম্নরূপে সংশোধন করা যেতে পারে:
কোন লোক অথবা স্ত্রী যদি, অপর কোন স্ত্রীর অথবা স্বামীর বিনা সম্মতিতে বা যৌণকামনার উপস্থিতি ছাড়া যৌণসঙ্গম করে, যে তাহাদের এরূপ যৌণসঙ্গম ধর্ষণের অপরাধ না হলে, সে লোক এবং স্ত্রীলোক ব্যভিচার করেছে বলে পরিগণিত হবে ও তাহাদের যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয় দণ্ডে শাস্তিযোগ্য হবে।
এক দেশে দুই আইন চলতে পারে
না। তাই ধারাটির সংশোধন কামনা করছি।
No comments