মনে পরে ছেলেবেলা
মনে পরে
হাসানুল হক
মৃদুল (১১/০২/২০১৭)
আল্লাহুআকবর
আল্লাহুআকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ...

গ্রামের দুরন্ত
কিশোর বলতে যা বুঝায় সেটা ছিলাম আমি। কৈশরের দুরন্তপনা কাউকে কখনো মুগ্ধ করেনি বরং
বহু ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলাকে জ্বালিয়ে মেরেছি। বাসার ফ্রিজে আম লিচু পচে গন্ধ বের হলেই
কখনো সেদিকে নজর পরত না, নজর ছিল অন্যের বাগানে। কার বাগানের কোন গাছের আমটা /
লিচুটা পেকেছে তা থাকত একদম মুখস্ত। লালের মাঠে[1]
বা নদীর ঘাটে কোথাও পদ চিহ্ন পরত না এমন দিন হয়ত নেই।
আজ ছেলেবেলা
মনে পড়ল ঘুড়ি ওড়ানোর স্বপ্ন দেখে। একসময়
ঘুড়ির নেশা পেয়ে বসেছিল। পড়াশুনা, খাউয়া দাউয়া, ঘুম সব কিছু ছিল ঘুড়ি কেন্দ্রিক।
যখন বই পড়তে বসতাম তখন মনে হত এই বইটাকে কি ঘুড়ি বানিয়ে ওড়ানো যাবে না? যখন খেতে
বসতাম তখন মনে হত প্লেট টাকে যদি ঘুড়ি
বানিয়ে ঊড়াতে পারতেম তাহলে একটা গোল ঘুড়ি আকাশে উড়ত। ক্লাশে যে শিক্ষক বেশি মেজাদ
দেখাত মনে হত তাকে যদি ঘুড়ি বানাতে পারতাম তাহলে বানিয়ে উড়িয়ে দিতাম তারপর দিতাম
সুতা কেটে। এখনো এই ইচ্ছা টা রয়েই গেছে কোন শিক্ষক বকাবকি করলে তাকেও ঘুড়ি বানিয়ে
উঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।
আমি ছোট বেলা থেকেই কোন কিছুকে অনেক বড় করে
চিন্তা করতে ভালবাসতাম। ঘুড়ি নিয়ে বিশাল যে চিন্তা করেছিলাম তা হল আমার একটা ঘুড়ির
কোম্পানি থাকবে আমি হব সেই কোম্পানির মালিক সবাই আমাকে স্যার বলে ডাকবে। বিদেশেও
আমাক কোম্পানী থাকবে ঘুড়ির। ঘুড়ি উড়ানো ও বানানো শেখানোর একটা স্কুল ও বানাতে
চেয়েছিলাম সেকালে।
বাড়ির আঙ্গিনার
এক কোনে একটা টিনের ঘর ছিল যেটা ছিল আমার হেড কোয়াটার । ছোট বেলার যে সব
সরঞ্জামাদি ছিল তার সবই সেখানে সাজিয়ে রাখতাম। সেসবের মধ্যে ছিল প্রচুর বিভিন্ন
ডিজাইনের ঘুড়ির কালেকশন, সেভেন আপ এর দুই লিটার এর বতলের মাঝে ভরে রাখতাম কাঁচের
মার্বেল। ছিল অরেক রকম ম্যাসের ঠোংগা। যা দিয়ে বানিয়েছিলাম এক তাসের সম্রাজ্য।
তাসগুলর বিভিন্ন মান থাকত। কনটা ১০০ কোনটা ১০০০।
ক্লাস টু তে
পড়া অবস্থায় শেলি ম্যাম নামের একজন ম্যাম ছিলেন আমাদের তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস
করেছিলেন কে কে বড় হতে চাই সবাই অনেক আনন্দের সহিত হাত তুলেছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস
করেছিলেন কেন বর হতে চাই। সবার উত্তর প্রাইয় একি রকম ছিল যে তখন কোন কাজ করতে হলে
আর বাবা মা কে বলা লাগবে না তাঁরা নিষেধ করবে না। যা খুশি করতে পারব।
মলিন মুখে
সেদিন তিনি বলেছিলেন ছোট বেলায় তাঁদেরও বড় হতে ইচ্ছে হত। তারপর বড় হয়ে নাকি তাঁদের
আবার ছোট হতে ইচ্ছে হয়। সেদিন বাঁকা চোখে ম্যাম দেখে মনে মনে ভেবেছিলাম ম্যাম বোধয়
পাগল হয়ে গেছে। কেউ ছোট হতে চায় নাকি আবার!! এখন বুঝি কেন সেদিন ম্যাম আবার ছোট
বেলায় যেতে চেয়েছিলেন।
মনে হয় একটু বেশিই
দুষ্ট ছিলাম, স্কুলের রেড লিস্টের শীর্ষ স্থান থেকে নিজের নাম সরাতে পারিনি কখনো।
কোন অকাজ হলে আমাদের ক জনের নামেই সমন আসত কাজটা করি আর না করি। শিক্ষকদের ধারনা
ছিল এমন কাজ আমরা ছাড়া অন্য কাউকে চিন্তা করার ক্ষমতা আল্লাহ তাদের দেয় নাই। দুষ্ট
ছিলাম কিন্তু কোনদিন স্বজ্ঞানে শিক্ষক বা বয়বৃদ্ধদের সাথে বেয়াদবি করেছি বলে মনে
পরে না। রেড লিস্টের সাথে সাথে ভালবাসার লিস্টেও নামটা প্রথমেই থাকত।
শত শত
কিলোমিটার দূরে এসে বাবা মাকে মিস করি খুব। তাঁরা আমাকে কোন কাজে কোন দিন বাধা দেন
নি। তাঁরা আমাকে শুধু ভাল আর খারাপ টা বলে দিতেন কোনটা করব আর কোনটা করব না তার
দায়িত্ব ছিল আমার।
সেই ছোটবেলার
প্রতিটা মূহর্ত অন্তর দিয়ে উপভোগ করতাম ভালবাসতাম , তখন ভাবতেই পারি নি এই সহজ সরল
সময়গুলো শেষ হয়ে যাবে। প্রবেশ করতে হবে এই জটিল শহরে।
[1] লাল একজন ব্যক্তির নাম। তার একটি ফাকা জমি ছিল,
যাকে আমরা পাড়ার ছেলেরা খেলার উপযোগী করে তুলেছিলাম। তাকে আমরা নাম দিয়েছিলাম
লালের মাঠ।
No comments