বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহ
বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশ গণপরিষদে (বর্তমানে জাতীয় সংসদ ) এই সংবিধান গৃহিত হয়, এবং একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর বা বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী হতে এটি কার্যকর হয়। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬শ সংশোধনীসহ এটির মোট ১৬ বার সংশোধন করা হয়েছে। তবে এসব সংশোধনীর মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পঞ্চম সংশোধনী, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সপ্তম সংশোধনী এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক বাতিল করা হয়েেছ। এই সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদ সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়।
১. প্রথম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম সংশোধনী পাস হয়। প্রথম সংবিধান সংশোধনে সংবিধানের ৪৭ আর্টিকেলের সঙ্গে একটি নতুন আর্টিকেল যুক্ত করা হয়। যেটি সংবিধানে আর্টিকেল ৪৭ (ক) নামে পরিচিত। যেখানে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের আন্তর্জাতিক বিচার অনুসারে বিচারের আওতায় এনে বিচারের কথা বলা হয়েছে।
১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম সংশোধনী পাস হয়। প্রথম সংবিধান সংশোধনে সংবিধানের ৪৭ আর্টিকেলের সঙ্গে একটি নতুন আর্টিকেল যুক্ত করা হয়। যেটি সংবিধানে আর্টিকেল ৪৭ (ক) নামে পরিচিত। যেখানে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের আন্তর্জাতিক বিচার অনুসারে বিচারের আওতায় এনে বিচারের কথা বলা হয়েছে।
২. দ্বিতীয় সংবিধান সংশোধনী:
১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী পাস হয়। যেখানে সংবিধানের আর্টিকেল ২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২ কে সাময়িকভাবে রহিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্টকে। আর আর্টিকেল ৩৩ এর ক্ষমতায়ন করার জন্য একটি নতুন আর্টিকেল যুক্ত করা হয়েছে আর্টিকেল ১১ -এর সঙ্গে। যেটি ১১ (ক্) নামে পরিচিত। যে ক্ষমতা বলে প্রেসিডেন্ট দেশে জরুরী অবস্থা জারী করতে পারবেন। আর তখন সংবিধানে বর্ণিত কিছু মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রের জনগণ ভোগ করতে পারবে না।
৩. তৃতীয় সংবিধান সংশোধনী:
১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী পাস হয়। যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ২৫ বছর মেয়াদি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি অনুমোদন করা হয়। যেখানে দুই দেশের সীমানা নির্ধারণ ও ছিটমহল বিনিময়ের কথা রয়েছে।
৪. চতুর্থ সংবিধান সংশোধনী:
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়। সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করা হয়। মাত্র ৪টি সংবাদপত্র রেখে বাকিগুলো বাতিল করা হয়। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল নামে দেশে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল থাকার আইনগত বৈধতা দেওয়া হয়। বিচারবিভাগের কিছু স্বাধীনতা রহিত করা হয়।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়। সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করা হয়। মাত্র ৪টি সংবাদপত্র রেখে বাকিগুলো বাতিল করা হয়। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল নামে দেশে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল থাকার আইনগত বৈধতা দেওয়া হয়। বিচারবিভাগের কিছু স্বাধীনতা রহিত করা হয়।
৫. পঞ্চম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সামরিক শাসন, সকল অর্ডিন্যান্স, আইন ও কার্যকলাপকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। যেটি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নামে বেশি পরিচিত।
৬. ষষ্ঠ সংবিধান সংশোধনী:
১৯৮১ সালের ১০ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে সংবিধানের আর্টিকেল ৫১ ও ৬৬ কে সংশোধন করে বলা হয় যে, রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীগণের অফিস হবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।
৭. সপ্তম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সামরিক শাসন, সকল অর্ডিন্যান্স, আইন ও কার্যকলাপকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। আর বিচারপতিদের অবসরের বয়স সীমা ৬২ থেকে ৬৫ তে বাড়ানো হয়।
১৯৮১ সালের ১০ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে সংবিধানের আর্টিকেল ৫১ ও ৬৬ কে সংশোধন করে বলা হয় যে, রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীগণের অফিস হবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।
৭. সপ্তম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সামরিক শাসন, সকল অর্ডিন্যান্স, আইন ও কার্যকলাপকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। আর বিচারপতিদের অবসরের বয়স সীমা ৬২ থেকে ৬৫ তে বাড়ানো হয়।
৮. অষ্টম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৮৮ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে আর্টিকেল ২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০ তে সংশোধন আনা হয়। যাতে বলা হয়, বাংলাদেশে একটি ইসলামী রাষ্ট্র। ঢাকার বাইরে ৬টি হাইকোর্টের শাখা খোলা হয়। বাংলা ও ঢাকা'র ইংরেজি বানান সংশোধন করা হয়। আর দেশের কোনো নাগরিক বিদেশ থেকে কোনো সম্মাননা নিতে চাইলে প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাগবে।
১৯৮৮ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে আর্টিকেল ২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০ তে সংশোধন আনা হয়। যাতে বলা হয়, বাংলাদেশে একটি ইসলামী রাষ্ট্র। ঢাকার বাইরে ৬টি হাইকোর্টের শাখা খোলা হয়। বাংলা ও ঢাকা'র ইংরেজি বানান সংশোধন করা হয়। আর দেশের কোনো নাগরিক বিদেশ থেকে কোনো সম্মাননা নিতে চাইলে প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাগবে।
৯. নবম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৮৯ সালের ১১ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের নবম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। দুই টার্মের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন প্রেসিডেন্ট।
১৯৮৯ সালের ১১ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের নবম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। দুই টার্মের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন প্রেসিডেন্ট।
১০. দশম সংবিধান সংশোধনী:
১৯৯০ সালের ১২ জুন বাংলাদেশ সংবিধানের দশম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে আর্টিকেল ৬৫ সংশোধন করা হয়। সংসদে ৩০ টি সংরক্ষিত মহিলা আসন বরাদ্ধ করা হয়। আর সেই সংরক্ষিত আসন ১০ বছরের জন্য বরাদ্ধ হবে।
১৯৯০ সালের ১২ জুন বাংলাদেশ সংবিধানের দশম সংশোধনী পাস হয়। যেখানে আর্টিকেল ৬৫ সংশোধন করা হয়। সংসদে ৩০ টি সংরক্ষিত মহিলা আসন বরাদ্ধ করা হয়। আর সেই সংরক্ষিত আসন ১০ বছরের জন্য বরাদ্ধ হবে।
১১. একাদশ সংবিধান সংশোধনী:
১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ সংবিধানের একাদশ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্ধিন আহমেদ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্টের সকল দায়িত্ব পালন করবেন আর ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ৯ অক্টোবর ১৯৯১ পর্যন্ত নতুন প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাসকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে প্রধান বিচারপতি পুনরায় স্বপদে ফিরে যাবেন।
১২. দ্বাদশ সংবিধান সংশোধনী:
১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকারের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ রহিত করা হয়।
১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকারের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ রহিত করা হয়।
১৩. ত্রয়োদশ সংবিধান সংশোধনী:
১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে নির্বাচনকালীন সময়ে দেশে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। যে সরকারে একজন প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন, যিনি হবেন সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। আর ১০ জন হবেন নিরপেক্ষ উপদেষ্টা।
১৪. চতুর্দশ সংবিধান সংশোধনী:
২০০৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী পাস হয়। সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করা হয়। আর বিচারপতিদের অবসরের বয়স সীমা ৬৫ থেকে ৬৭ তে বাড়ানো হয়। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী'র অফিসের আলাদা আলাদা ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
১৫. পঞ্চাদশ সংবিধান সংশোধনী:
২০১১ সালের ৩ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে সংবিধানের সংরক্ষিত মহিলা আসন ৪৫ থেকে ৫০-এ বাড়ানো হয়। সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম ও ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। আর সংবিধানের অষ্টম ও একাদশ সংশোধনী'র আংশিক পরিবর্তন করা হয়।
২০১১ সালের ৩ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। যেখানে সংবিধানের সংরক্ষিত মহিলা আসন ৪৫ থেকে ৫০-এ বাড়ানো হয়। সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম ও ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। আর সংবিধানের অষ্টম ও একাদশ সংশোধনী'র আংশিক পরিবর্তন করা হয়।
No comments