পাদ

স্তন্যপায়ী প্রাণীকুলের একটি অপরিহার্য দৈনন্দিন কার্য। তবুও ব্যাপারটাকে কেন যেন সবাই খাটো করে দেখে, অন্তত দেখার চেষ্টা করে।

ফেইসবুকে একটা কথা প্রচলিত আছে, খুন করে স্বীকার করলেও পাদ দিয়ে স্বীকার করার মত বুকের পাটা কারো নাই।।

 আসলে পাদ কি?

পরিপাকতন্ত্রের নানারকম ভেল্কিবাজিতে আমাদের পেটের অভ্যন্তরে যে মিথেন গ্যাস প্রস্তুত হয়, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় তাকেই পাদ বলে। বৃহদান্ত্রে জমে থাকা মল বা পায়খানার সাথে ঈষৎ যুক্ত হয়ে ইহা আমাদের মলদ্বার দিয়ে নির্গত হয়। 

অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পাদ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, এর সাথে বিস্তর পরিমাণে পায়খানার যৌগিক অণুও নির্গত হয় বটে। 

যেহেতু, হজমকৃত মলও হাল্কার উপর ঝাপসা বের হয়, সুতরাং পাদে গন্ধ থাকাটাই স্বাভাবিক।

পাদ সাধারণত অধিকাংশ স্তন্যপায়ীদেরই হয়ে থাকে। এমনকি শোনা যায় যে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রাণী নীলতিমিও পাদ দেয়। কি ভয়ংকর ঘটনা!! 

তারা পাদ দিলে মোটামুটি সমুদ্রের পারিপার্শ্বিক কয়েক নেটিক্যাল এলাকায় মিনি সুনামি অনুভূত হয়ে থাকে!

আসা যাক মানুষের পাদ প্রসঙ্গে। 

পৃথিবীতে সভ্যতার ইতিহাসে এমন কোনো বাপের ব্যাটা কিংবা বেটি এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় নি যে পাদ দেয় না!!! 

পাদ সবাই-ই দেয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা থেকে শুরু করে, রাণী এলিজাবেথ

 বিখ্যাত নায়িকা এমা ওয়াটসন, কিংবা সালমা হায়েক

নায়ক ব্রাড পিট থেকে এঞ্জেলিনা জোলি... সবাই-ই!!! 

এমনকি Hero Alom -ও

এমনকি গুজব আছে, জেনিফার লোপেজ ও কিম কারদাশিয়ান পাদের উপর ডিপ্লোমা করে পাদ দিয়ে দিয়ে তাদের পুচ্ছদেশের পেশীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

পাদ বেশ কয়েকরকম হয়। যথাঃ

১. ফুস পাদঃ অপর নাম জেনট্যলমেন'স পাদ। যে পাদ অনেকক্ষণ চেপে রেখে ধরে রাখতে না পেরে বের হয়ে যায়। গন্ধ হয়।

২. ধুম পাদঃ এটা মূলত যারা পাদ নিয়ে লজ্জিত নন, তারা দিয়ে থাকেন। পেটে গ্যাস অনুভূত হওয়া মাত্রই তারা সেটা সশব্দে ছেড়ে দেন। গাঁজন হয় না বলে এতে সাধারণত গন্ধ হয় না।

৩. কুইয়া পাদঃ এটার অপর নাম চুরাপাদ। এটা লম্বা সময় ধরে পায়খানা আটকে রাখার পরের পাদ। হিরোশিমার বোমার চাইতে ভয়ংকর এই পাদ। মানুষের ভীড়ে এটা দিয়ে ধরা খেলে খুনের মামলার আসামী হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

৪. চুকা পাদঃ অপর নাম টক পাদ। এটা ছাড়লে সাধারণত আশেপাশের মানুষ গন্ধের সাথে জিহবার ডগায় ঈষৎ টক অনুভব করে। এটাকে কুইয়া পাদের আব্বা বলা চলে।

৫ কষা পাদঃ পায়খানা কষা হলে এই পাদ হয়। পায়খানার মতোই কষ্টকর এই পাদ। এটা দিতে গেলে গূহ্যদ্বার ছিড়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। প্রচুর গন্ধ হয়। তবে জলীয় উপাদান কম থাকায় গন্ধ বেশিক্ষণ থাকে না।

৬. বাদাম/ডিম পাদঃ বাদাম বা সিদ্ধ ডিমের কুসুম খেলে এই পাদ হয়। এর গন্ধ সাধারণত বাদাম/ডিম বিটলবণের গন্ধের মতো, আলাদা করা প্রায় অসম্ভব! অনেকক্ষণ গন্ধ থাকে। বাস বা রেলে মানুষের পেটে গ্যাস হলে অনেকে বুদ্ধি করে এসব খায়। খেয়ে নিজের পাদের গন্ধ ঢাকার চেষ্টা করে।

৭. ঝোল পাদঃ ডায়রিয়ার সময় এই পাদ হয়। চলাফিরার মূহুর্তে দেয়া একটু ঝুকিপূর্ণ। যেকোনো সময়ে হলুদ ঝোলে প্যান্ট মাখামাখি হয়ে যেতে পারে। এর শব্দ সাধারণত 'ফেড়ফেড়' বা 'ভ্যাড়ভ্যাড়'।

৮. খানদানি পাদঃ এটা সাধারণত বংশ পরম্পরায় মানুষ দিয়ে থাকে। জীনগত বৈশিষ্ট্য। গর্বমেশানো এই পাদে গন্ধ থাকে না।

পাদ আমাদের নৈমত্তিক জীবনের অংশবিশেষ। আসুন আমরা পাদ দেই। এবং সগর্বে বলি, "হ্যাঁ, আমিই সেই মানুষ। হ্যাঁ, আমিই জাস্ট একটা পাদ দিলাম"..:-D


1 comment:

Powered by Blogger.