প্রযুক্তি আর আকাশ সংস্কৃতিতে শিশু-কিশোররা জড়াচ্ছে অসামাজিক ও অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে


স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: পৃথিবীতে নানা জাতির রয়েছে নানা ভাষা। সংস্কৃতিও বৈচিত্র্যময়। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ আর আকাশ-সংস্কৃতির দাপটে বিশ্বব্যাপী চলছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে যে কোনো দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি-চেতনা আজ বিশ্ব পরিমন্ডলে ব্যাপ্ত হয়ে পড়েছে।


আকাশ-সংস্কৃতির কল্যাণে গোটা পৃথিবী পরিণত হচ্ছে এক সংস্কৃতিতে। ভাবতে ভালই লাগে সকলে এমন একটি পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে থাকবে না হানাহানি, রক্তপাত শুধু থাকবে ভালবাসা আর সমৃদ্ধি।

শুধুমাত্র স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলই নয়, ইন্টারনেট তথা কম্পিউটার কেন্দ্রিক তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে আকাশ সংস্কৃতি পেয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। ঘরে ঘরে টেলিভিশন আজ ডিস এন্টেনার সাথে সংযুক্ত এবং আকাশ সংস্কৃতির সাথে একই সাথে সংযুক্ত। ফলে আজকের মানুষ নিজ জাতির সংস্কৃতিগত উত্তরাধিকার যেমন লাভ করে থাকে, ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ধারার উত্তরাধিকারী হয়ে উঠে। মূলত আকাশ সংস্কৃতির কারণে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব সংস্কৃতি তার স্বাভাবিক গতিপথ হারায়।

আকাশ সংস্কৃতির এই যুগে হাত বাড়ালে ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে পুরো পৃথিবী। শুধু মাত্র ক্লিক করলে হাজির হচ্ছে আপনার চাওয়া যে কোন ছবি, গান, কিংবা শিক্ষণীয় বিষয়। এক জাতির যে বিষয়কে সংস্কৃতি মনে করেন অন্যদের জন্য হয়ত তা নায়। ইউরোপীয় ও অ্যামেরিকান সংস্কৃতিতে পর্ণ্যগ্রাফি স্বাভাবিক হলেও বাংলাদেশের জন্য ...।
আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে সহজ হয়েছে এ বিষয় গুলোর। প্রাপ্ত বয়স্ক বিষয় গুলো চলে এসেছে শিশু কিশোরদের হাতে। স্মাট ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব কিংবা কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযুক্ত থাকলেই সব কিছু (পর্ণ্যগ্রাফি) হাতের কাছে।

প্রকৃতিভাবে মানুষ যৌন চাহিদাসহ জন্মায়। তবে সঠিক সময়ের পূর্বে তা কল্যাণকর নয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বে শিশু-কিশোরদের হাতে পর্ণ্যগ্রাফির মত যৌন উপাদান আসায় কিছু না বুঝেই ধাবিত হচ্ছে বিপদের মুখে। জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অসামাজিক ও অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে। এদের মধ্যে ইপটিজিং, যৌন হরানি, পরকিয়া, ধর্ষণ উল্লেখ যোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের ৫খুনের ঘটনার আসামী বাদী শফিকের ভাগিনা মাহফুজ হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে দেয়া জবান বন্ধীতে উল্লেখ করে, মামী লামীয়ার সাথে যৌন সর্ম্পক করতে ব্যর্থ হলে দুশিশুসহ ৫জনকে খুন করে তিনি।

আকাশ সংস্কৃতির থাবা নারায়ণগঞ্জেও অশুভ প্রভাব বিস্তার করছে। আমাদের যুব সমাজ আজ বিপথগামী। এদিকে নারায়ণগঞ্জে ঘটে যাওয়া ৫খুনের পর এ বিষয়টি (পর্ণ্যগ্রাফি) নিয়ে বিভিন্ন স্তরের অভিভাবকদের ভাবিয়ে তুলেছে। তারা মনে করেন আকাশ সংস্কৃতির মুখে এখনই লাগাম টানা না হলে ভবিষ্যতে শিশু-কিশোরসহ যুবসমাজের মধ্যে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাবে।

ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন করার পিছনে সাইবার অপরাধকে কারণ হিসেবে ব্যাখা করলেন সরকারি তোলারাম কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মহসীন। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, এ গুলোই অপরাধীর মনের সঞ্চার ঘটায়। এছাড়া চলতি বছরে সরকারের আইন ব্যবস্থা ও বিচার বিভাগের উন্নয়ন হওয়াতে নারী ও শিশু নির্যাতন বিগত বছর গুলোর তুলনায় বর্তমানে অনেক কম দেখা যাচ্ছে বলেও তিনি দাবী করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আশুতোষ দাশ মনে করেন, ইভটিজিং, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন এ ধরণের অপরাধের পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে সাইবার অপরাধ। প্রাপ্ত বয়স্ক বিষয় (পর্ণ্যগ্রাফি) শিমু-কিশোরদের হাতের নাগালে আসায় ইভটিজিং, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের মত ঘটনা ঘটছে। এমন সামাজিক অবক্ষয়ের সমাধান করতে সচেতনতা বৃদ্ধি অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সম্প্রতি বেশ কিছু তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক আলোচনা সভায় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক (আইসিটি) পুরুস্কার প্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা বরাবরই অপ্রাপ্ত বয়সীদের ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন করে আসছেন। তিনি বলে আসছেন, অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অপরাধ প্রবনতায় ঝুকে যাচ্ছে শিশু-কিশোরা। তাই অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি আরো বেশি সচেতন হতে হবে বলে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বার বার নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

আকাশ সংস্কৃতির এই যুগে ইন্টারনেট পর্ণ্যগ্রাফির মত বিষয় গুলো অবাধে ছড়িয়ে পড়ছে। যা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমাদের সংস্কৃতির পরিপন্থী বিষয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ প্রদানের লক্ষ্যে অচিরেই ভিনদেশি এসব ক্ষতিকর সাইট গুলো বন্ধের ব্যাপারে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। ইতিবাচক সংস্কৃতির পরিপন্থী সব বিষয় বন্ধ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর পারিবারিক পরিবেশে বড় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক।

No comments

Powered by Blogger.