বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে 'র' এবং সিআইএ -মাসুদুল হক

ধন্যবাদ Abu Hena M Kamal (Assistant Professor, Department of Law, ASAUB) স্যারকে এমন তথ্যবহুল একটি পুস্তক এর সন্ধান দেউয়ার জন্য।

এই বইটির লেখক হল মাসুদুল হক

 তিনি এই বইটির মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে

 তৎকালীন দুই প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা RAW এবং

CIA এর ভূমিকা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

সারসংক্ষেপ খানিকটা এমন:

(১) আজকের বাংলাদেশ শুধু ১৯৭১ সালের নয় মাসের ফল নয় বরং ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর উপমহাদেশের রাজনীতিতে যে পরিবর্তন সূচিত হয় তাঁর পরিনতি এটা । ১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর চীন-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে যুক্তরাষ্ট অনুরুধ করে ভারতের পক্ষ হয়র চীনের বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য । আইয়ুব তা পত্তাক্ষান করে । তারপর সিআইএ নেমে পরে আইয়ুব উৎখাতে আর ‘র’ নেমে পরে পাকিস্তানের পৃথকীকরণে ।

(২) আইয়ুব হঠাতে সিআইএ দুইটি পরিকল্পনা মাথায় নেয় । একটি হল সামরিক চাপ আরেকটি হল রাজনৈতিক চাপ ।

          (ক)সামরিক চাপটা হল তারা পরিকল্পনা করে ভারত-পাকিস্তান একটি যুদ্ধ বাধিয়ে দেয় ১৯৬৫ সালে । তাতে তাদের ধারনা ছিল পাকিস্তান এই যুদ্ধে ভারতের কাছে হেরে যাবে তখন সেনাবাহিনী দিয়ে তাকে উৎখাত করা হবে । কিন্তু রাশিয়া ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তাসখণ্ড চুক্তির মাধ্যমে তাদের আশা ভঙ্গ করে দেন ।

         (খ)সিআইএ এর রাজনৈতিক চাপ হল ছয় দফা আন্দোলন ।

(৩) এইদিকে raw ছাত্রসমাজের মাধ্যমে পূর্বপাকিস্তানের স্বাধীনতা সম্বলিত কিছু লিপলেট ছাপিয়ে ছড়িয়ে দেয় পুরো পূর্বপাকিস্তানে বিশেষ করে ছাত্রসমাজের মধ্যে । যাদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়ে হয় তা হল তাদের দ্বারা তৈরিকৃত ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামের একটি দল । শেখ মুজিব অবশ্য তাদের চরমপন্থি বলেছেন ।

(৪)১৯৬৯ সালের গণআন্দলনের মাধ্যমে ইয়াইয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে আইয়ুব খান পদত্যাগ করে । ইয়াইয়া খান আন্দলন থামানোর জন্য ১৯৭০ সালের নির্বাচন ঘোষণা করে । ৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করে । সামরিক জান্তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে যার ফলে ৭১ সালের ২৫ মার্চ হত্যাযজ্ঞ চালায় ।

(৫) ২৫ শে মার্চের পর ‘র’ তাদের অনেক দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পস্তুতি শুরু করে । আর এইদিকে সিআইএ পাকিস্তানের ভাঙ্গন ঠেকানর জন্য নেমে পরে । ভারত তাদের পুরানো শ্ত্রুর বিরুদ্ধে যাওয়ার আগে যেকোন একটি পরাশক্তির সাহায্য দরকার মনে করে । তারা রাশিয়ার সাহায্য পাওয়ার পর যুদ্ধ শুরু করে । তবে ভারত অবশ্যই এই যুদ্ধ শুরু করে ভারত-পাকিস্তানের তৃতীয় যুদ্ধ হিসেবে ।

(৬)এইদিকে স্বাধীনতার যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেয় প্রবাসী সরকার কিন্তু প্রবাসী সরকারের নিয়ন্ত্রণে মুজিব বাহিনী যুদ্ধ করতে অস্বীকার করে । তাদের এই বিরোধিতার সুযোগ নেয় ‘র’ । তারা স্বাধীনতার পরবর্তীতে তাদের ব্যাবহারের জন্য তৈরি করে বিশেষ করে বামপন্থি নির্মূলে ।

(৭) মুজিব বাহিনী ৭১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করে পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে । তারা প্রবেশ করার দুই মাস আগে মুক্তি বাহিনী বাংলাদেশের ভিতরে যুদ্ধ শুরু করে । তারা পাকিস্তানিদের বিপক্ষে যুদ্ধ না করে বামপন্থি মুক্তিযুদ্ধাদের হত্যা শুরু করে । তারা মুক্তিযদ্ধাদের অবাঞ্চিত , ডাকাত ও সাম্প্রদায়িক বলে ভারতে প্রচার করে ।

(৮) এইদিকে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের সাথে ভারতের গোপন ৭ টি চুক্তি হয় তা র মধ্যে একটি ছিল বাংলাদেশের কোন সেনাবাহিনী থাকবেনা আভ্যন্তরীণ নিরাপওার জন্য একটি প্যারা মিলেটারি থাকবে যা পরবর্তীতে রক্ষীবাহিনী হয় । পূর্বে যারা মুজিব বাহিনিতে ছিল তাদের নিয়েই রক্ষী বাহিনী গড়ে তলে ‘র’ শেখ মুজিবের নির্দেশে । তারা প্রায় ৪০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও ভিন্ন মতের মানুষকে হত্যা করে ।

(৯)ছয় দফার মূল লেখক রুহুল কুদ্দুস এই বইটিতে তাঁর উল্লেখ করা হয় । রুহুল কুদ্দুস নিজেই তা স্বীকার করেন । আর ছয় দফা পেশ করার পর পাকিস্তানের প্রতিটি পত্রিকা ভাল করে সংবাদ করে তাঁর মূল কারন সিমলা চুক্তিকে আরাল করার জন্য । আর পাকিস্তান সরকারই পত্রিকাগুলোকে আদেশ করে ।

(১০) শেখ মুজিব সম্পর্কে এই বইটিতে বলা হয় তিনি হলেন একজন দ্বিচরিত্রের লোক । আর তিনি কখনও কার উপকার স্বীকার করেন না । এই জন্য দেখা যায় তিনি ছয় দফাকে নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন ।

(১১)সর্বশেষ যেই কথাটি বলা হয় তা হল মুজিব বাহিনী থেকে শেখ মুজিবের আদেশে ‘র’ রক্ষী বাহিনী তৈরি করে আর ‘সিআইএ’ তৈরি করে গণবাহিনী । রক্ষীবাহিনী ও ‘র’ কে প্রতিহত করার জন্য গণবাহিনী তৈরি করা হয় ।

এই বইটির শেষে মোট পাঁচ জনের সাক্ষাতকার দেয়া হয় তারা হল :

 হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী ( মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের দিল্লী মিশন প্রধান ছিলেন)

রুহুল কুদ্দুস (ছয় দফার প্রকৃত লেখক )

আব্দুর রাজ্জাক (মুজিব বাহিনির চার জনের এক জন )

তোফায়েল আহমেদ (মুজিব বাহিনির চার জনের এক জন )

হাসানুল হক ইনু (মুজিব বাহিনির প্রশিক্ষক ছিল) ।

No comments

Powered by Blogger.